Header Ads Widget

জাতীয়করণ বনাম অর্ধ বেতন ও সিকি বোনাস

প্রায় ষোল   বছর যাবৎ সিকি বোনাস। কথাটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। বেসরকারী স্কুলের শিক্ষকরা ঈদ/পূজায় সিকি বোনাস পান। বিপত্তিটা ঘটে ঈদ এলেই কিংবা পূজার সময়। পরিবারের বায়না মিটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়, বেসরকারি শিক্ষকদের। কি করবেন কাওকেতো বলাও যায়না। নিজের চাহিদা না মিটলেও তাঁরা সন্ত্বোষ্ট। কিন্তু বিপত্তি ঘটে পরিবার সন্তানের ক্ষেত্রে। এদিকে ২০১৮ সাল থেকে বার্ষিক বর্ধিত বেতন ৫%  হলেও ৪% কর্তন নতুন যোগ হয়ে শিক্ষকরা পেলেন ১%। বেচারা শিক্ষকরা এই ১%ই খুশি। আশায় আশায় কাটে তবুও যদি সরকারের মন গলে, করোনার মাঝে এখন না হউক, পরবর্তীতে যদি জাতীয়করণের ঘোষণা আসে। ২১ তারিখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপুমনির ভাষ্য অনুযায়ী শিক্ষক সমাজ হতাশ। তিনি একটি বেসরকারী চ্যানেলে ভার্চ্যুয়াল টক শোতে মন্তব্য করেন, শিক্ষা ব্যবস্থা পুরো সরকারি হতে হবে এমন কোন কথা নেই। শিক্ষকরা এতোদিন আশার বীজ বুনেছিল। এতোটুকু কথাতে আশা যেন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার পথে। সিকি বোনাস, অর্ধ বেতন, নাম মাত্র চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া এক হাজার পেলেও অন্তত বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকিতে শিক্ষকরা এতটুুুকু আশার বাণী শোনতে পারবেন। দূরের শিক্ষকরা এখনো লজিং বা জায়গির মাস্টার থাকতে হয়। কারণ বাড়ীভাড়া দিয়ে থাকার মতো টাকা তাঁরা পাননা। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির এই বাজারে একজন শিক্ষক খুবই অসহায়। গুটিকয়েক শিক্ক্ষক প্রাইভেট টিউশনি করে অতিরিক্ত আয় করেন তাদের দিয়ে সবাইকে মাপলে হবেনা। দেশে এতো উন্নতি হচ্ছে, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, দুই এর নির্মাণ কাজ চলমান, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, উড়াল সেতু, কর্মকর্তা কর্মচারীদের দ্বিগুণ বেতন করে দেওয়া, আরো অসংখ্য মেঘা উন্নয়ন কাজ। করোনার মাঝেও জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অন্যতম। তবুও আমাদের দেশের বেসরকারি শিক্ষকরা জাতিকে শিক্ষিত করার গুরুদায়িত্ব হাতে নিয়ে জীবীকা নির্বাহের জন্যে এই দূর্মূল্যের বাজারে চিকিৎসা ভাতা পাঁচশত টাকা, বাড়িভাড়া একহাজার, আর ১০% কেটে মূল বেতনের বাকী অংশ। সেলুকাস! যে শিক্ষকরা জাতিকে শিক্ষার আলো বিলাবেন কচিকাঁচা ছেলেমেয়েদের শোনাবেন আশা জাগানো বাণী , তাঁরাই আজ হতাশার মাঝে নিমজ্জিত। দুই ঈদে পূর্ণাংগ দু'টো বোনাস। পূর্ণাংগ বেতন ভাতাদি এসব বৈষম্যকে দূর করা সম্ভব একমাত্র জাতীয়করণ। সকল সমস্যার সমাধান এখানেই। জাতীয়করণ শিক্ষকদের প্রাণের দাবী। একই বই একই পড়া পড়িয়ে সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষক বেসরকারী স্কুলের একজন শিক্ষকের চেয়ে অনেক ব্যবধানে বেতন পান। একদেশে দৈত্নীতি সত্যি বেমানান। ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ এন.টি.আর.সি.-এর মাধ্যমে হচ্ছে। এখনতো আর শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, অযোগ্যদের নেওয়া হচ্ছে এমন দোহাই দেওয়ার অবকাশ নেই। তবে শিক্ষকদের সুযোগসুবিধা দিতে কেন দ্বিমত? 

        অবিলম্বে শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করে জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের প্রাণের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন রইল। এ ব্যাপারে আমাদের শিক্ষক নেতৃবৃন্দেকে সোচ্চার হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাই পারেন প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ, উচ্চ মাধ্যমিকের মতো মাধ্যমিক স্তরকেও একবারে ঘোষণা দিয়ে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করতে। শিক্ষকরা খন্ড খন্ড দলে ভাগ না হয়ে একই প্লাটফর্মে এসে সরকারের কাছে দাবি জানাতে হবে। নতুবা দাবি আদায়ে দীর্ঘসূত্রীতা তৈরী হবে। মনে সকলের দাবি একটাই, জাতীয়করণ চাই। এখানে দল মত বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই মমতাময়ী ও নমনীয়। নন-এমপিও শিক্ষকরা যখন দাবি জানালো , সরকার তাঁদেরকে পাঁচ  হাজার টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন। যদিও এটা সামান্য। তবুও সরকারের সদিচ্ছার প্রশংসা করতে হয়। তবে মাসে মাসে নন-এমপিও শিক্ষকদের সামান্য কিছু হলেও প্রণোদনা চালু রাখা উচিৎ। নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভূক্ত করা দরকার। তাঁরাও একই কারিকুলামের বই পড়ান, সরকারের নিয়ম-নীতি মেনেই।  যদি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হয়ে থাকে, তবে মেরুদন্ড দূর্বল রেখে, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। এতে জাতি পরবে মুখ থুবড়ে। কারণ যে জাতি শারিরীকভাবে মোটা তাজা, শক্তিশালী সেই জাতি উন্নত নয়, যে জাতি যত শিক্ষিত , সেই জাতি তত উন্নত।  কথাটা যুগযুগ ধরে দ্রুবতারার মতই চিরন্তন সত্য। 

Post a Comment

0 Comments